বিশেষ প্রতিনিধি::
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেন (৬৭) সোমরাত রাত দেড়টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী ৫ ছেলে ৪ মেয়ে রেখে গেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সিলেট নায়েবপুল জামে মসজিদে জানাযা শেষে বেলা ১১ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ জগন্নাথপুর আনা হবে। পরে দুপুর ২. ৩০ মিনিটে উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের ¤্রীরামসি স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

বার বার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আকমল হোসেন, পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আকমল হোসেন গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সন্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে সোমবার রাত সাড়ে ১২ টায় তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত দেড়টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমেদ মুক্তা, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লালন। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালে সিলেটের বাসায় মরদেহ নিয়ে আসা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতরণা ঘটে।

সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেন। পরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে গোসল করিয়ে মরদেহ মরচুয়ারিতে রাখা হয়। আকমল হোসেনের সংক্ষিপ্ত জীবনপুঞ্জি মীরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তালেব আলীর সন্তান আকমল হোসেন ১৯৯৮ সালে মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সে সময় ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে গোল্ড মেডেল পান। ২০০৯ সালে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিলে উচ্চ আদালতের রায়ে শাহারপাড়ার এক কেন্দ্রে পুন ভোটের মাধ্যমে তিনি ২০১১ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সিলেট বিভাগের ¤্রষ্ঠে চেয়ারম্যান মনোনীত হন। গত ২ নভেম্বর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আবারও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গত ৮ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আকমল হোসেন ১৯৯৮ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি একজন সৎ,পরিচ্ছন্ন নির্ভিক ধৈর্যশীল আপাদমস্তক সজ্জন রাজনীতিবীদ ছিলেন। শ্রীরামসি স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শহীদ স্মৃতি সংসদ শ্রীরামসির উপদেষ্টা ছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর চাচাতো ভাই সাদ উদ্দিন শহীদ হন। আওয়ামী লীগের শোক তাঁর মৃত্যুতে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেনের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারন ও বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মরদেহে বেলা ১১ টায় শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে তিনি অনুরোধ জানান।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন